একটি **"সংবিধান সংস্কার কমিশন"** গঠন করে বিগত এক দশকের অধিক কালের সকল বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করে রহিত/সংশোধন করা হবে। সংবিধানে **গণভোট (Referendum) ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন** করা হবে।
প্রতিহিংসার রাজনীতির বিপরীতে সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক **"Rainbow Nation"** প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর জন্য একটি **"National Reconciliation Commission" (জাতীয় সমন্বয় কমিশন)** গঠন করা হবে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি **"নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার"** ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় **ভারসাম্য** আনয়ন করা হবে। নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের **সুসমন্বয়** করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য (Checks and Balances) প্রতিষ্ঠা করা হবে।
পরপর **দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না**।
বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে **"উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা" (Upper House of the Legislature)** প্রবর্তন করা হবে।
আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এমন সব বিষয় ব্যতীত **অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন** বিবেচনা করা হবে।
**"প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২" সংশোধন** করা হবে। **পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান** নিশ্চিত করা হবে (ইভিএম নয়)। RPO, Delimitation Order এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে।
সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে **স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা** পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিবার লক্ষ্যে আইনি সংস্কারের মাধ্যমে এই সকল প্রতিষ্ঠান **পুনর্গঠন** করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে **শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে** নিয়োগ প্রদান করা হবে।
বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি **"জুডিশিয়াল কমিশন"** গঠন করা হবে। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে **"সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল" ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন** করা হবে। **"বিচারপতি নিয়োগ আইন"** প্রণয়ন করা হবে।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়িয়া তুলিবার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি **"প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন"** গঠন করিয়া প্রশাসন সংস্কার ও পুনর্গঠন করা হবে। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে **মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণকে একমাত্র মাপকাঠি** হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান ও সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি **"মিডিয়া কমিশন"** গঠন করা হবে। **ICT Act- 2006, সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও Special Power Act- 1974, Digital Security Act- 2018 সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল কালাকানুন বাতিল** করা হবে। সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে।
দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করা হবে না। বিগত দেড় দশকব্যাপী সংঘটিত অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করিয়া একটি **শ্বেতপত্র প্রকাশ** এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কার করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী **"ন্যায়পাল (Ombudsman)"** নিয়োগ করা হবে।
সর্বস্তরে **আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা** করা হবে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। Universal Declaration of Human Rights অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। গত দেড় দশক যাবত সংঘটিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ইত্যাদির সাথে জড়িতদের প্রচলিত আইন অনুযায়ী **সুবিচার নিশ্চিত** করা হবে।
অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক সমন্বয়ে একটি **"অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন"** গঠন করা হবে। প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে **ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ** করা হবে।
**"ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার"** এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করিবেন। পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতিগোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সকল অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের **(Price-index based) ন্যায্য মজুরি** নিশ্চিত করা হবে। **শিশু শ্রম বন্ধ** করা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওড়-বাওড় ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের **বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচী** গ্রহণ করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে **দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল** করা হবে। জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি হইতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আমদানি নির্ভরতা পরিহার করিয়া **নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন** এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৈদেশিক সম্পর্কের সর্বক্ষেত্রে **বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য** দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার **সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না**। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করিয়া গড়িয়া তোলা হবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রাখিয়া প্রতিরক্ষা বাহিনীকে **সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা** হবে।
ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলিকে **অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান** করা হবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে যেন তাহারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখিতে পারে। মৃত্যুজনিত কারণ কিংবা আদালতের আদেশ ব্যতীত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে **সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না**।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে **শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন** করা হবে এবং তাঁহাদের **যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান** করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাগণের তালিকা যাচাই-বাছাই করিয়া একটি সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
আধুনিক ও যুগোপযোগী **যুব উন্নয়ন নীতিমালা** প্রণয়ন করা হবে। **এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান** করা হবে। যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধি (Skill development) করে **“ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড”** আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের **বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা** করা হবে।
জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় **নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ** নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে **নারীদের প্রাধান্য** দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে **চাহিদা ভিত্তিক শিক্ষা (Need-based education)** এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে **জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষাকে (Knowledge-based education)** প্রাধান্য দেওয়া হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত **ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা** করা হবে। জাতীয় বাজেটে **শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ** করা হবে।
“সবার জন্য স্বাস্থ্য” ও **“বিনা চিকিৎসায় কোন মৃত্যু নয়”** এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের **"NHS" এর আদলে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (Universal health coverage)** প্রবর্তন করিয়া **সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড** চালু করা হবে। জাতীয় বাজেটে **স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ** করা হবে।
কৃষিপণ্যের **ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত** করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়নে কৃষিপণ্যের জন্য **সরকারি ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন** করা হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়া হইলেও **শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা** চালু করা হবে।
দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার করিয়া সারা দেশে **সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা** গড়িয়া তোলা হবে। দেশের সমুদ্র বন্দর ও নৌ-বন্দর সমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও ক্ষতি মোকাবিলায় **টেকসই ও কার্যকর কর্মকৌশল** গ্রহণ করা হবে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করিয়া **প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি** করা হবে। নদী ও জলাশয় দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধে **খাল-নদী খনন-পুনঃখনন কর্মসূচি** বাস্তবায়ন করা হবে।
**তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি** খাতকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করিবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। **মহাকাশ গবেষণা** এবং **আণবিক শক্তি কমিশনের** কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক সুযোগ সমৃদ্ধ করা হবে।
একটি জাতীয় **মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে** শহরে ও গ্রামে কৃষি জমি নষ্ট না করিয়া পরিকল্পিত **আবাসন ও নগরায়নের নীতিমালা** গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের **সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠির আবাসন নিশ্চিত** করা হবে।